Thursday, November 21, 2013

সান ফ্লাওয়ার

পোস্ট - ১

ছেলের কল্যাণে শৈশব ফিরে পেয়েছি। নিজের শৈশবে যত না খেলেছি, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি খেলছি। ছোটবেলায় আমি একটু শান্ত স্বভাবের ছিলাম। খুব একটা ছুটোছুটি করিনি। এখন এই বয়সে এসে ছেলের সাথে করছি। ছেলেকে খুশী করতে ওর সাথে রাস্তায় Frog Jump করি, Mickey Mouse এরমত Tip Toe করে হাঁটি আর Rhymes বলি। এত খুশী হয় আমার খোকন। ওর মুখের হাসির জন্য সব করতে পারি। একবারও ভাবি না পাছে লোকে কি ভাববে। একইভাবে ও যদি জেদ করে রাস্তায় শুয়ে বা বসে পড়ে, আমিও ওর সাথে রাস্তায় বসে পড়ি। একবারও লোকের পরোয়া করিনা। আমি জানি এতে আমার বাচ্চার কতখানি উপকার হচ্ছে। ওরা Privacy পছন্দ করে। অন্য কেউ পাশে এসে বসুক এটা চায়না। তাই তাড়াতাড়ি উঠে যায়। আর রাস্তায় Frog Jump করলে ও যেই পরিমাণ খুশি হবে, তার বদলে ওকে দিয়ে কিছুক্ষণ কথা শোনানো যাবে। এই সবই অন্য Parent দের কাছ থেকে শেখা।

মাত্র ৭ মাস ইংল্যান্ডে ছিলাম। এত কিছু জেনেছি, শিখেছি যা সারাজীবন বাংলাদেশে থেকেও শিখতে পারতাম না। ওখানে Special Child এর Parent রা বাস্তাবতাকে স্বীকার করে নিয়ে বাচ্চাকে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করে। অন্য Parent দেরকে জানানোর মত জনসেবা করে। আর আমাদের দেশেতো প্যারেন্টরা বাস্তবতাকে স্বীকারই করতে চায়না। এই ধরনের বাচ্চাদের লালন পালন করার Basic Knowledge ও বেশির ভাগ Parent এর নেই। কারণ তারা এটাকে কোনো সমস্যা বলে মনে করতে চায় না। মনে মনে ভাবতে চায় বাচ্চা বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ্ অবশ্যই ঠিক হবে কিন্তু তার জন্য Proper Guidance দরকার। বাচ্চাকে বোঝা অনেক দরকার। একটা বই পড়েছিলাম,  “Ten things every child with Autism wants you knew” একজন Special Child এর মায়ের লেখা। বইটি পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে। মোটা বইটি থেকে কয়েকটা লাইনের সারমর্ম তুলে ধরছি। ইংরেজিতে কথাগুলো যতখানি হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল, বাংলার অনুবাদ করতে গিয়ে ঠিক সেরকম শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সেই ১০টা জিনিস যা প্রতিটা অটিষ্টিক বাচ্চা চায় যে আমরা জানি, এরকমঃ

(১) আমি একটি সম্পূর্ণ শিশু। অটিজম আমার সত্ত্বার একটা অংশ মাত্র, এটা আমার সম্পূর্ণ সত্ত্বা না। আমার প্রতি তুমি অনেক নিচু ধারনা পোষন করো না। যদি ভাবো যে আমি কিছু পারবো না, তাহলে আমার স্বাভাবিক উত্তর হবে, “তাহলে চেষ্টা করো কেন?”

(২) আমার ইন্দ্রিয়গুলো একসাথে সম্বন্বিতভাবে কাজ করতে পারে না। স্বাভাবিক আলো, শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ, স্বাদ যা তোমরা উপেক্ষা করে যেতে পারো, সেগুলো আমাকে প্রচন্ড বিরক্তি দেয়। এজন্য হয়তো মাছের কাউন্টার অথবা সবজির কাউন্টারের সামনে নিয়ে হেঁটে গেলে আমি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে যাই এবং তুমি জানো আমি আমার আবেগ ঠিকমত প্রকাশ করতে পারিনা।

(৩) এমন না যে আমি বেয়াড়া বলে তোমার নির্দেশ শুনি না। আমি আসলে বুঝতে পারি না। যখন তুমি রুমের বাইরে থেকে আমাকে কোন কথা বলো, আমি সেটা, “্ > / $ # @” এমন শুনি। তাই দূর থেকে চিৎকার করে আমাকে কোন কথা না বলে, আমার কাছে এসে সোজা ভাষায়, ধীরে ধীরে বলো। এটা আমার জন্য অনেক সোজা হয়।

(৪) আমি ভাষাকে শাব্দিক অর্থে বুঝি, এর ভাবার্থ বুঝিনা। তাই আমার সাথে প্রবাদ প্রবচন দিয়ে কথা বলো না।

(৫) আমি মুখের কথা ছাড়াও অন্য যেসব উপায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করি, সেসব বোঝার চেষ্টা করো। আমার জন্য আমার প্রয়োজন, সুবিধা-অসুবিধা, আনন্দ-দুঃখ বলে ঠিকমত বোঝানো কঠিন। আমার আচার আচরণ, চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করো।

(৬) ছবি দেখাও, আমি এতে ভালো বুঝি। আমার সামনে কোনো কথা বললে আমার কাছে সেটা বাস্প হয়ে বাতাসে উড়ে যায়। কিন্তু ছবি আমার স্মৃতিতে থেকে যায় বহুদিন। আমি আমার প্রয়োজন মত স্মৃতি থেকে ছবি বের করে নিয়ে তা ব্যবহার করি। আমার সারাদিনের সব কাজগুলো ছবির মাধ্যমে বলে দাও, তাহলে আমার জন্য বুঝতে সুবিধা হয়। এবং একটা কাজ শেষ করে আরেকটা কাজে যেতে সমস্যা হয় না।

(৭) আমি কি পারি না সেটা চিন্তা না করে আমি কি পারি সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখো। অন্য সবার মত আমিও এমন পরিবেশে কিছু শিখতে পারবো না যেখানে সবাই ধরে নিবে যে আমি কিছুই পারবো না। প্রতিটা কাজ করার একাধিক সঠিক উপায় থাকে। হয়তো আমি অন্যভাবে করি। হয়তো সোজা উপায় রেখে আমি কঠিণ উপায়ে তোমাদের চেয়ে ভালো করি।

(৮) সামাজিক আদান প্রদানে আমাকে সাহায্য করো, এমন না যে আমি পার্কে অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে চাই না। কিন্তু আমি জানি না কিভাবে ওদের সাথে গিয়ে খেলবো। আমাকে শিখিয়ে দাও। আর ওদেরকে উৎসাহিত করো আমাকে ডেকে সাথে খেলায় নিতে। আমি অনেক খুশি হবো সবার সাথে খেলতে পেরে। খেলতে গিয়ে কোনা বন্ধু যদি পড়ে ব্যথা পায় আর আমি হেসে ফেলি, তার মানে এই না যে আমি খুশি হয়েছি। আমি জানি না কি ভাবে সান্তনা দিতে হয়, আমাকে শিখিয়ে দাও কিভাবে গিয়ে বন্ধুকে সান্তনা দিবো।

(৯) আমি কিসে আবেগপ্রবন হয়ে ভেঙ্গে পড়ি সেটা খুঁজে বের করো। কোন পরিবেশ, কাজ, মানুষ আমাকে আবেগপ্রবন করে তোলে সেগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করো, একটা প্যাটার্ন অবশ্যই পাবে। হয়তো কোনো খাবারের এলার্জী অথবা ঘুমের সমস্যায় আমি এমনটা করতে পারি।

(১০) ভালোবাসো শর্তহীন ভাবে। “যদি তুমি এমন করো” অথবা “যদি তুমি এমন না করো” তাহলে তোমাকে ভালবাসবো এমন না বলে, শর্তহীনভাবে ভালবাসো। মনে রেখো আমি অটিজমকে বেছে নেইনি। এটা সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য নির্ধারন করে রেখেছে। এটা আমার উপর হয়েছে, তোমার উপর না। তোমার সাহায্য ছাড়া আমি সামনে এগোতে পারবো না। আমাকে সাহায্য করো, দেখি দুইজন মিলে কতদূর এগিয়ে যাওয়া যায়। আমার অটিজমকে আমার অক্ষমতা না ভেবে আমার ভিন্ন ক্ষমতা হিসাবে দেখো। আমি হয়তো ভালো আই কন্ট্যাক্ট করতে পারি না, মানুষের সাথে ভালো মিশতে পারি না। কিন্তু দেখো আমি মিথ্যা বলি না, খেলায় চিটিং করি না, অন্যের ব্যপারে মন্তব্য করি না। আমার উপর ভরসা রাখো। তিনটা শব্দ আমাদের চলার সাথী   ধৈর্য্য, ধৈর্য্য এবং ধৈর্য্য।

এই বইটা পড়ে পৃথিবীর সব দেশের Parent দের একই কথা মনে হয়েছে, এ যেন তার সন্তানের মনের কথা। ইস আগে যদি বুঝতে পারতাম।

এই ধরনের বাচ্চারা বাস-ট্রেন এই সব বড় যানবহনের চড়তে পছন্দ করে। আমাদের বাসার জানালা দিয়ে ১০০ নাম্বার বাস যেতে দেখলেই আমার ছেলের কান্না শুরু হয়ে যেত। কত সময় শুধু শুধু বাসে চড়ে এক Stoppage থেকে অন্য Stoppage ঘুড়ে বেড়িয়েছি। বাসে চড়ার ব্যপারে ও এতই Excited থাকতো যে Driver কে টাকা দেয়া, Change ফেরত নেয়া, টিকেট নেয়ার মত ধৈর্য্য ওর থাকতো না। তাই আমি আমাদের রুটের বাস ভাড়া ২ পাউন্ড ১০ পেনি ছোট কাগজে মুড়িয়ে রেডি করে বাসা থেকে নিয়ে বের হতাম। বাস  Stoppage এ অপেক্ষা করার সময় আমার ছেলের হতে দিয়ে বলতাম, তুমি  Driver Uncle কে Coin দিযে বলবে “Uncle, ticket please” ভেবেছিলাম ওর ধৈর্য্য হবে না । কিন্তু আল্লাহর রহমতে ও পেরেছে। দায়িত্ব দেয়াতে মহাখুশি সে। এখনও বাংলাদেশে এসে আমাদের গাড়ির ড্রাইভারকে বলে, “Uncle, ticket please” কতদিন যে আমারা মা-ছেলে মিলে ১০০ নাম্বার বাসের পেছনে দৌড়ে বাস ধরেছি। কারন বাস মিস্ হয়ে গেলে আমার ছেলেকে ম্যানেজ করা মুশকিল হবে। তারপর বাসে উঠেই “Wheels on the bus go round and round”- action দিয়ে গাইতাম মা-ছেলে মিলে। অনেক অনেক খুশি হতো ও।

প্রথম যে দিন ট্রেনে চড়ালাম ওকে, বেশ কিছুক্ষন Platform এ দাঁড়িয়ে ওকে ট্রেন চলাচল দেখালাম। ট্রেনের ভেতরে অনেক জোরে শব্দ হবে, তাও বললাম। তবে যতই বলি না কেন, মনে মনে আমরা প্রস্তত ছিলাম যে ট্রেনের শব্দে ও ভয় পাবে এবং আমাদেরকে চেইন টেনে নেমে যেতে হবে। কিন্তু আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে ও সুন্দর করে এক ঘন্টা ট্রেনে জার্নি করলো। পাশ দিয়ে প্রচন্ড শব্দে যখন অন্য ট্রেন চলে যাচ্ছিলো, ও একটু শক্ত হয়ে ছিলো কিন্তু নেমে যেতে চায়নি। এরপর থেকে তো ট্রেন রাইড, বাস রাইড এর চেয়ে প্রিয় হয়ে গেলো।

বড়  Mature মানুষের সাথে আমরা যেভাবে গল্প করি, ওর সাথে ও সেভাবে গল্প করি। তবে সহজ এবং ছোট বাক্যে, ধিরে ধিরে। যেহেতু ওর Attention কম, রাস্তার দুইপাশে যত জিনিস পড়ে, সব কিছু ওকে দেখাই। এভাবে ওর  Attention আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে আল্লাহর রহমতে। এখন ও আমাকে দেখায় রাস্তার দুইপাশে কি কি দেখছে।

Speach Therapy এর জন্য একটা নষ্ট টেলিফোন দিয়ে imaginary call করা যেতে পারে। বাচ্চার পছন্দের মানুষদের নাম বলে, পছন্দের বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলা। শুরুতে সালাম, কুশল বিনিময় করে নিলে Speech Therapy এর সাথে সাথে Socialization ও শেখানো হবে। বাচ্চার খুব পছন্দের খাবারটা Restaurant এ গিয়ে অর্ডার করা, টাকা দেয়া, Change নেয়া, ট্রেতে করে নিজের খাবার টেবিল পর্যন্ত নিয়ে আসা একজন Special Child কে শেখানো সম্ভব। স্কুলে রোজ বেশী Tiffin দিয়ে ওর বন্ধ এবং Teacher কে বলি, ও থেকে নিয়ে খেতে। প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও এখন ও বুঝে গেছে Tiffin শেয়ার করে খাওয়ারই বিষয়। ওকে যখন দায়িত্ব দেই ছোট ভাইকে পানি খাইয়ে দিতে।  কেউ ওকে দেখে বলবে না এই বাচ্চার কোনো Difficulties আছে। তবে ওকে দিয়ে যত কাজ করাই, Order না দিয়ে Request করে বলি এবং কাজ শেষে Appreciate করতে কখনো ভুলি না। এমনকি ওর ছোট ভাইও সব সময় appreciate করে। বেশিরভাগ সময় দুই ছেলেকে নিয়ে একসাথে Activity করি, ওরা একজন আরেকজনের কাজ থেকে শিখে। দুইজনেরই উপকার হয়। আমার ছোট ছেলে অনেক অল্প বয়সে কথা, পড়াশুনা শিখে গেছে বড় ভাইয়ের কল্যাণে।

এক সময় আমার ছেলে শুধু Floor এ শুয়ে থাকতো। একজনের কথামত আমিও ওর পাশে শুয়ে পড়তাম। ও সাথে সাথে উঠে যেতো। কারন ওর Privacy নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে। কতদিন Bathroom এর বাইরের পাপোশের উপর শোয়ার অভ্যাস হয়েছিল। অভিজ্ঞ একজন বললো, বাথরুমের দরজার পাপোশের আগে, একটা টুল দিয়ে রাখো। ওরা Barrier পছন্দ করে না। আর পাপোশের কাছে যাবে না। সত্যি তাই হয়েছে। কতদিন এত Sticker তোলার অভ্যাস হয়েছিল যে Super Store এ গিয়ে সব জিনিসের Price Tag তুলে দিতো। পরামর্শ অনুযায়ী, ওর হাতে লোশনের পুরো বোতল দিয়ে দিতাম। ইচ্ছামত সারা গায়ে লোশন মাখাতো (সত্যিকার অর্থে লোশন দিয়ে গোসল করতো)। সাথে ছোট কাটা বল দিয়ে হাতে exercise করতাম। একটু কমেছে এখন এই অভ্যাস। তবে কিছুদিন পর পর আবার বেড়ে যায়।

প্রতিদিন অবশ্যই সারা গায়ের Muscle এ deep pressure, এবং joint compression, facial message, gum message দিতে হবে। Occupational Therapist এর কাছ থেকে শিখে নিতে হবে কিভাবে Deep Pressure দিলে বাচ্চার উপকার হবে কিন্তু ব্যথা পাবে না। বড় কাঁটা কাঁটা Exercise বল দিয়ে ঘরে বসেই রোজ Exercise করানো যায়। এদের Boundless Energy থাকে। প্রতিদিন Trampoline এ কতক্ষন Jump করলে, দড়ি লাফ করলে Tired হবে, রাতে ভালো ঘুমাবে। গরম পানি দিয়ে রোজ রাতে গোসল করতে পারলে ঘুম ভালো হয়। অনেক বাচ্চারাই পেট ভরেছে কিণা বুঝতে পারে না। বাসার সবাই মিলে Role Play করে Tummy Full শিখানো যেতে পারে। পানি খেতে না চাইলে Count করে ১০ অথবা ২০ Sip পানি খাওয়ানো যেতে পারে। Counting এর দিকে মন থাকলে পানি যে খাচ্ছে বুঝতে পারবে না।

প্রথমবার সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে Social Story শোনাচ্ছিলাম। একদিন সিনেমা হলে গিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে একটা সিনেমা চলাকালীন সময়ে ওকে দেখাতে নিয়ে গেলাম হলের ভেতরটা কেমন অন্ধকার থাকে, কত জোরে শব্দ হয়। প্রথমে অন্ধকারে ঢুকতেই চাইছিল না। পরে পছন্দের Cartoon দেখে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ দেখলো। পরদিন সিনেমা দেখতে গেলাম। বাসা থেকে ঠিক করে গিয়েছিলাম ও যতক্ষণ থাকতে চাইবে, ততক্ষণই থাকবো। এবারও আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে ও পুরো ২ ঘন্টা হাসি মুখে সিনেমা দেখলো। কিন্তু সেটা প্রথম এবং শেষ সিনেমা, সুন্দর করে বসে দেখা। এরপর থেকে যখনই আমরা সিনেমা দেখতে যাই, ও পুরো থিয়েটার জুড়ে দৌড়ে বেড়ায়, জোরে জোরে Rhymes বলে, খুশিতে চিৎকার করে।

একটা দৈনন্দিন রুটিন যে কত উপকারে আসে তা বলে বোঝানো যাবেনা। তবে রুটিনটা হতে হবে ছবির মাধ্যমে, যাকে বলে “Visual Clock” সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত প্রতিটা কাজের ছবি Serial অনুযায়ী একটা বোর্ডে সাজিয়ে রাখতে হবে। নিচে একটা ঝুড়ি থাকবে। একটা কাজ শেষ হলে বাচ্চা নিজে সেই কাজের ছবিটা খুলে নিচের ঝুড়িতে রাখবে। এভাবে অযথা জেদ করা অনেকখানি কমবে। হয়তো বাচ্চা সিরিয়ালের ৬ নং কাজটা করার জন্য জেদ করছে। তখন ওকে দেখাতে হবে, এই কাজটা উপরের পাঁচটা কাজের পরে আসবে। তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে এবং আগে এই পাঁচটা কাজ শেষ করতে হবে। কয়েকদিনের মধ্যে (কোরো ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে) বাচ্চারা রুটিনে এত অভ্যস্থ হয়ে যায় যে Parent এর জন্য বাচ্চাকে Manage করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

ধৈর্য্য ধরতে শিখানোর জন্য Stop Watch এর কোনো বিকল্প নাই। প্রথমে ১০ পর্যন্ত Count করে ধৈর্য্য ধরতে শিখানো। তারপর আস্তে আস্তে সময় বাড়াতে হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, বাচ্চা যেন Upset হয়ে না যায়।

Social Story এর ভূমিকা অপরিসীম, বাচ্চাকে যা শিখাতে চান, সেই ঘটনাকে নিয়ে সোজা ভাষায়, ছোট বাক্যে Social Story তৈরী করে বার বার বাচ্চাকে শোনালে বেশিরভাগ বাচ্চাই Response করে। এজন্য সারাবিশ্বে Social Story এর গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক বই আছে এই বিষয়ে। কিন্তু একজন Parent তার নিজের বাচ্চার জন্য যে Social Story তৈরী করবে, সেটা অণ্য একজন লেখকের Social Story এর চেয়ে অনেক বেশি কাজে দেবে। কারণ বাচ্চাকে তার Parent এর চেয়ে বেশি আর কেউ চিনে না।

নিজের সন্তানের প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং তাকে সম্মান করা। কোনোভাবেই তাকে ছোট করে দেখা যাবে না। বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখতে হবে সারাক্ষণ। অবসর বসে থাকতে দেয়া যাবেনা। TV, Computer থেকে যত দূরে রাখা যায় ততই ভালো। তবে Educational Video অথবা Cartoon দেখলে “Timer” দিয়ে দেখবে ৩০ মিনিট বা ৪০ মিনিট। দৈনন্দিন কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমরা এদেশের Parent রা বাচ্চাকে কোনো কাজ করতে দেইনা অতিরিক্ত আদর করে। এতে করে বাচ্চা অনেক অবসর পায়, যেটা আমরা TV দেখে বা Computer এ Game খেলে ব্যয় করার অনুমতি দিয়ে থাকি। কিন্তু দৈনন্দিন কাজে বাচ্চাকে সম্পৃক্ত করার সুফল অনেক অনেক Parent পেয়েছে। মাকে টেবিলে খাবার পরিবেশনে সাহায্য করা থেকে  শুরু করে, খাবার শেষ হবার পর টেবিল গুছানো, ব্যবহার করা টিস্যু বিনে ফেলা, নিজের খেলনা গুছানো, এটা-সেটা এনে দেয়া এইসব কাজে বাচ্চা যেমন ব্যস্ত থাকবে, তেমন Instruction Follow করতে শিখবে। যেমন, সোজা গিয়ে, বামে একটা নীল রংয়ের বক্স আছে, তার মধ্যে থেকে একটা কলম নিয়ে আসো” প্রয়োজনে মৌখিক Instruction এর সাথে Prompt করতে হতে পারে। যদি বাচ্চা Instruction Follow করতে না পারে, তাও Encourage করতে হবে, এইতো তুমি পারছো” কাছে গিয়ে সাহায্য করা যেতে পারে।

আমরা বাচ্চাকে সারাক্ষণ কোনো কারণ ছাড়াই আদর করি, কোলে নেই, চুমু নেই। এটা বন্ধ করতে হবে। বাচ্চাকে আদর করতে হবে ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে। যেমন বাচ্চাকে অনেকবার ডাকার পরও না তাকালে, যখনই তাকাবে, তখনই বাচ্চা কাছে থাকলে কোলে নিয়ে আদর করে চুমু দিতে পারি। দূরে থাকলে হাততালি দিয়ে “Well Done” বলতে পারি। কয়েকদিনের মধ্যে বাচ্চা পুরস্কার (আদর, চুমু, হাততালি) পাবার জন্য একবার ডাকার সাথে সাথেই ইনশাল্লাহ্ Eye Contact করবে।

Reward Chart তৈরী করা যেতে পারে। বাচ্চাকে কিছু কাজের Target দিয়ে পুরস্কার হিসেবে ওর সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটা দেয়া যেতে পারে। যেমন ওকে বলা যেতে পারে যদি তুমি Toilet এ গিয়ে পিসু করো, তাহলে রোজ তোমার Reward Chart এ একটা করে Star Sticker লাগানো হবে। এভাবে ১০টা Star Sticker জমা হলে, তোমাকে পার্কে নিয়ে যাবো। বাচ্চারা এটাতে অনেক Response করে। আর Sticker গুলো ওর নিজের হাত দিয়ে লাগানো যেতে পারে।

যেই বাচ্চা সম্পাহের ৭ দিনের নাম জানে না, তাকেও রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বলা যেতে পারে, “Good morning, today is Monday” সারাদিন একটু পর পর বলতে হবে “Today is Monday” বাচ্চা বুঝুক আর না বুঝুক। ৭টা কাগজে আলাদা করে ৭ দিনের নাম লিখে রোজ একটা করে দেয়ালে লাগাতে  হবে। বাচ্চারা বারের নামটা ছবি হিসেবে ব্রেণে Capture করে নিবে। তখন বাচ্চার পছন্দের কাজগুলো ছুটির দিনে করার কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করা যায়। যেমন গুক্রবার আমরা শিশু পার্কে যাবো অথবা আইসক্রীম খাবো।

Special Child কখনো চার দেয়ালে বন্দি হয়ে থাকতে চায়না। মুক্ত খেলো বাতাসে ছুটে বেড়াতে ভালবাসে। আমার ছেলেকে রোজ ঝড়, বৃষ্টি, তুষার সব আবহাওয়ায় পার্কে বেড়াতে নিতে হয়। কত সময় খারাপ আবহাওয়ায় পার্কে গিয়ে দেখি আমরা ছাড়া আর কেউ নেই সেখানে। আমার ছেলে এও খুশী হয় পার্কে ইচ্ছেমত ছুটোছুটি করে। অনেক Parent ছুটির দিনে পার্কে টাবু টানিয়ে সারাদিন থাকে। এই Reward টা দিবো বলে সারা সপ্তাহ বাচ্চাকে দিয়ে অনেক কথা শোনানো যায়।

মেমোরী বুক” যে কত পরিমানে উপকার দেয় তা বলে বোঝানো যাবে না। বিশেষ করে যেসব বাচ্চার Speech Delay আছে। একটু সময় নিয়ে ছবি বাছাই করে একটা ডিমাই সাইজ খাতাতে লাগিয়ে অবসর সময়ে বাচ্চাকে নিয়ে বসা যেতে পারে। এই মেমোরী বুক নিয়ে ৩০/৪০ মিনিট খুশীতে পার করে দিতে পারবে বাচ্চা। পরিবারের সবার ছবি, প্রতিবেশী, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, স্কুলের টিচারের ছবি, বেড়াতে যাওয়ার ছবি, জন্মদিন বা অণ্য কোনো অনুষ্ঠানের ছবি দিয়ে মেমোরী বুক সাজানো যেতে পাবে। প্রথম প্রথম Parent প্রতিটা ছবিতে আঙ্গুল দিয়ে ছবির মানুষদের নাম বলবে এবং ঐ ছবির ঘটনাটা Interestingly বাচ্চাকে বলে শোনাবে। আস্তে আস্তে বাচ্চা নিজেই আঙ্গুল দিয়ে Point করবে এবং ঘটনাটা বলা শিখবে।

আমি আমার বাচ্চার সাথে প্রথমে সুরে সুরে কথা বলতাম, যখন ওর Eye Contact একবারে কমে গিয়েছিল। কথা বলাম সময় গলার স্বরে Variation আনতে হবে। বেশির ভাগ বাচ্চাই Music, Rhymes এ অনেক ভালো Response করে। বাচ্চার ঘরে Background Music (গান না, শুধু Soft Music) চালিয়ে রাখা যেতে পারে, এক ধরনের CD পাওয়া যায়, Peace and Tranquility”। এই CD টা এক ধরনের Therapy ও বটে। CD টা চালানোর পর দেখা যাবে বেশ কিছুক্ষণ কোন শব্দ নেই, শুধু নিস্তদ্ধতা। হঠাৎ গাছ থেকে শুকনা পাতা ঝরে পড়ার শব্দ। মানুষ একটু চমকে যায় এতে। আবার নিস্তব্ধতা। হঠাৎ শুকনা পাতার উপর দিয়ে একটা কাঠবিড়ালীর দৌড়ে যাওয়ার শব্দ। আবার নিস্তাব্ধতা। হঠাৎ জঙ্গলের পাশের হাই-ওয়ে দিয়ে দ্রুত গতিতে একটা গাড়ি চলে যাওয়ার শব্দ। প্রথম প্রথম বাচ্চারা এই  CD টা শুনে ভয় পায়। কিন্তু আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে যায়। যেসব বাচ্চারা হঠাৎ করে শব্দ শুনলে ভয় পায়, তাদের জন্য এটা অনেক উপকারী।

বাইরে প্রতিটা মহল্লায় একটা করে চিলড্রেন সেন্টার থাকে এবং সেখানে একটা করে Sensory Room থাকে। Special Child এর জন্য Sensory Room বিরাট ভূমিকা রাখে। Visual এবং Auditory Sense এর সমস্যা যেসব বাচ্চাদের তাদের জন্য অনেক উপকারী এই Sensory Room। এছাড়া যাদের Tactile Problem আছে তাদের জন্য ও অনেক দরকারী। Sensory Room এ নানারকম Light এর Effect, Sound Variation এর সাথে থাকে। Blinking Light থেকে শুরু করে, Disco Light পর্যন্ত থাকে। Projector থাকে। Floor এ Tactile Disc থাকে যা পায়ের তলার Hyper Sensitivity কমাতে সাহায্য করে। নানা ধরনের Surface থাকে হাতের তলার Hyper Sensitivity কমাতে। অনেক ধরনের Musical Instrument থাকে বাচ্চাদের বাজানোর জন্য। একটা আয়না ঘর থাকে। বাচ্চা বিভিন্ন Angle থেকে নিজেকে দেখে Safety Sense বাড়ায়। যেসব বাচ্চারা হাঁটতে গেলে ফার্নিচার/দরজায় ধাক্কা খায়, তাদের জন্য এই আয়না ঘর উপকারী। Bubble Doom থাকে, যেটা বাচ্চারা Color Change করতে পারে। Rainbow Wall থাকে । সেই Wall এ বাচ্চারা হাতের তালু দিয়ে চাপ দিলে Rainbow তৈরী হয়। আবার হাত সরালে চলে যায়।

ঘন্টা হিসেবে Sensory Room এর বুকিং দিতে হয়। বাংলাদেশে CRP তে ছোট আকারে Sensory Room আছে। আমার কাছে যদি পয়সা থাকতো তাহলে আমি বাইরের মত প্রতিটা মহল্লায় একটা করে Sensory Room বানিয়ে দিতাম।

প্রয়োজন অনুযায়ী Occupational Therapy এবং বিভিন্ন Speech Therapy দেয়া যেতে পারে। তবে সামাজিক বিষয়গুলো বাচ্চাকে মুখে না বলে বাসার বাকী সবাই মিলে করে ওকে শিখানো যেতে পারে। কোনো কিছু শিখাতে চাইলে বাড়ির সবাই মিলে একটা নাটকের মত তৈরী করে (Role Play) শিখালে বাচ্চার জন্য এটা অনেক সহজ হয় বুঝতে।

কুকিং ক্লাস অনেক দরকারী। উপকরনের নাম এবং পরিমান মনে রাখা, কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে রান্না করতে, Timer দিয়ে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করা এইসব বাচ্চার জন্য অনেক উপকারী। Play Dough হাতের তালুর Hyper Sensitivity এর জন্য দরকারী। ঘরেও Play Dough তৈরী করে দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া মা রুটি বেলার সময় বাচ্চাকে একদলা আটা আর পিঁড়ি বেলুন দিয়ে বসিয়ে দিতে পারে। বাচ্চা রুটি বেলে বিভিন্ন শ্যাপের কাটার দিয়ে কেঁটে বিস্কুট বানিয়ে আনন্দ পাবে, বিভিন্ন শ্যাপের নাম শিখবে সাথে সাথে ব্যস্তও থাকবে। কুকিং করার সময় চাকু, কেঁচি, চুলা এসব যে বিপদজনক সেটাও শেখানো যাবে যা Safety Sense Develop করতে সাহায্য করবে।

বেশিরভাগ Parent এবং Expert রা বাচ্চাকে “No” বলার চেয়ে “Stop” বলতে উৎসাহিত করে থাকেন।

Messy Play অনেক গুরুন্তপূর্ন ভুমিকা রাখে। প্রতিদিন গোসলের আগে একটা করে Messy Play রাখা গেলে বাচ্চার জন্য অনেক ভালো হয়। যেমন Sand Play, Water Play, বড় একটা ট্রেতে পাউডার ঢেলে আঙ্গুল দিয়ে এর উপর ছবি আঁকা, Water Color, Finger Painting, Hand Print, Foot Print, Bath Tub এ Foam তৈরী করে খেলা। তবে অবশ্যই Timer দিয়ে খেলতে দিতে হবে যেনো বাচ্চা অনেকক্ষণ ধরে খেলে সর্দি জ্বর বাধিয়ে না ফেলে। একটা Activity থেকে বাচ্চাকে তোলার জন্য পরের Activity এর ছবি দেখাতে হবে।

বিভিন্ন ধরনের Physical Play এবং Sensory Play Idea এর বই পাওয়া যায়। এইসব বই অনেক গবেষনা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা হয়। এই ধরনের বই পড়ে নতুন Idea নেয়া যেতে পারে।

Real Like Doll অনেক উপকারে আসে। আমার ছেলেকে যখন একটা Real Like Doll কিনে দিয়েছিলাম। ওটা হাতে পেয়েই ও বলল Baby is hungry নিজে কল্পনা করে বোতলে দুধ বানালো খাওয়ালো। শেষে বোতল ধুয়ে পরিস্কার করলো এবং পুতুলকে কাধে নিয়ে ঢেঁকুর তোলালো। আমি মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়েছিলাম। এত কিছু ও জানে আমি বুঝতেই পারিনি। পুতুলকে Potty তে বসিয়ে Toilet করায়, পরিস্কার করায়, ঘুম পারায়। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। অনেক সময় ওর নিজের খিদে পেলে বলে “Baby is hungry” নিজের Potty লাগলে বলে, Baby potty করবে”। আমার জন্য ওর প্রয়োজন বোঝা সহজ হয়ে গেলো।

আমার ছেলের এখনও Road Safety Sense তৈরী হয়নি। রাস্তায় যেদিক খুশী দৌড় দেয়, গাড়ির সামনেও চলে আসতে পারে, এক মুহুর্তের জন্যও ওর হাত ছাড়া যায় না। বাইরে যাবার সময় ওর পুতুলকে Stroller এ করে ওর হাতে দিয়ে দেই। কিছুক্ষণ হয়তো সুন্দর করে পুতুলের দেখাশোনা করলো। হঠাৎ ওর পছন্দের কোনো জিনিস দেখলো তো পুতুলকে রেখেই দৌড় দিলো সেদিকে। আমি আবার ওকে পুতুলের দায়িত্ব দেই। এভাবে বারবার দায়িত্ব দিতেই থাকি।

Real Like Baby এর যত্ন করতে দেখে আমি ওকে ওর ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব দিলাম। মাশাল্লাহ্ সে সুন্দর করে ছোট ভাইকে দেখে রাখতে পারে (যদিও সারাক্ষণ আমাকে ছায়ার মত থাকতে হয়)। বাইরে যাবার সময় ছোট ভাইকে জামা-জুতা পড়িয়ে দেয়, ভাইয়ের হাত ধরে রাখা, ভাইকে খাবার খাইয়ে দেয়া, পানি খাইয়ে দেয়া ইত্যাদি কাজ করে সে অনেক খুশী হয়। নিজেকে অনেক বড় এবং দয়িত্বশীল মনে করে। যদিও ওকে দিয়ে এসব কাজ করাতে যত সময় ব্যয় হয়, তারচেয়ে অনেক কম সময়ে আমি করে ফেলতে পারি। কিন্তু দেরী হলেও ওর জন্য এটা অনেক দরকারী। তাছাড়া এতে করে অন্য ভাইবোনের সাথে Special Child সম্পর্কও অনেক ভালো হয়।

একটা বই পড়েছিলাম My Brother is Different” এই বইটা Special Child এর অন্য ভাই বোনদের জন্য লেখা। সহজ কথায় এত সুন্দর করে লেখা বইটা যে এর থেকে অন্য ভাইবোনরা Special Child কে সহজেই বুঝতে পারবে। বেশিরভাগ পরিবারেই অন্য বাচ্চারা সাধারণত বাবা-মায়ের উপর রাগ হয় Special Child কে বেশি সময় এবং মনোযোগ দিতে হয় বলে। এই রাগ অনেক সময় ভাইবোনদের সুন্দর সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়। এই বইয়ে Idea দেয়া আছে কিভাবে বাবা-মায়েরা ছোটবেলা থেকেই অন্য বাচ্চাদেরকে তাদের Special ভাই/বোন সম্পর্কে ধারনা দিতে পারে।

আমার সবচেয়ে কষ্ট লাগে স্কুলের বিষয়টা এলেই। বাংলাদেশে শুধুমাত্র Severe Autistic বাচ্চাদের জন্য স্কুল আছে। তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। Mild/Moderate বাচ্চাদের জন্য Main Stream স্কুলে ভর্তির কোনো সুযোগই নাই। অথচ বাইরে Mild/Moderate বাচ্চারা Main Stream স্কুলেই যায়। ওদের জন্য আলাদা সিলেবাস থাকে। পড়ানোর ধরনটা বাচ্চার প্রয়োজণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। একজন করে Shadow টিচার থাকে বাচ্চাকে হাতে ধরে সবকিছু শিখানোর জন্য। Group Activity গুলোতে সবার সাথে কাজ করে। Study Time এ Shadow Teacher ঐ রুমেরই একটা Corner এ আলাদা টেবিলে বসে One to One কাজ করে। বেশিরভাগ বাচ্চারই আল্লাহ্'র রহমতে ২/১ বছরের মধ্যে আর Shadow Teacher এর প্রয়োজন হয় না। প্রতিটা স্কুলে একজন করে Special Education Need Co-coordinator থাকে। যিনি সব সময় বাচ্চার Parent এর সাথে যোগাযোগ রাখে। আরেকটা দরকারী জিনিস হল Communication Book Between Parent and Teacher” প্রতিদিন একটা ডায়েরীতে teacher আজ সারাদিন বাচ্চা স্কুলে কেমন ছিল তা লিখে দেয়। এবং Parent স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা বাসায় কেমন ছিলো তা লিখে। কয়েকদিন পর পর parent Special Education Need Co-coordinator এবং Head Teacher মিলে বাচ্চার Development নিয়ে আলাপ করে। কোনোদিন আমাদের দেশে এমন Education System হবে কিনা জানি না। আশা করি যেনো হয়।

Action Flash Card তৈরী করে বাচ্চাকে অনেক সহজেই দৈনন্দিন কাজের ধারনা দেয়া যায়। Road Safety এর জন্যও Flash Card তৈরী করে, Social Story এবং Picture এর মাধ্যমে কাজ করা যায়। বাচ্চাকে সবসময় একই বাক্য বলার চেষ্টা করতে হবে যেনো সেটা ওর Brain এ Store হয়ে যায়। আমি সবসময় রাস্তা পার হবার সময় একই বাক্য বলতে বলতে ওর মুখস্থ হয়ে গেছে Look left, look right, all clear, now go”। রাস্তায় ও যেনো যেদিকে খুশী দৌড় না দেয় তার জন্য ২টা কোন (Cone) দিয়ে Training দেয়া হচ্ছে। একটা Cone এর গায়ে লেখা Start, আরেকটা Cone এর গায়ে লেখা Stop, ওকে এখন এটা বোঝানোর চেষ্ট করা হচ্ছে যে Start” Cone থেকে শুরু করে “Stop” Cone এর মধ্যে তুমি ইচ্ছামত দৌড়াতে পারবে কিন্তু Stop” Cone পার হয়ে যেতে পারবে না। আমরা সবাই ওর সাথে সাথে করে দেখাচ্ছি। ইনশাল্লাহ্ একসময় বুঝতে পারবে।

বাচ্চার সাথে কথা বলার সময় একটা বাক্য ২/৩ বার না বলে কিছুক্ষণ পর পর একই বাক্য স্পষ্ট ভাষায়, সহজ করে, ধীরে ধীরে বলা ভালো। একই বাক্য বাসার সবাই বলতে পারলে আরো বেশি কাজ হয়।

বিভিন্ন Emotion এ বাচ্চার ছবি তুলে সেই ছবিগুলো বোর্ডে ঝুলিয়ে ওকে Emotion শেখানো যেতে পারে। যেমন ওর একটা খুশির ছবি দেখিয়ে বলা যেতে পাবে, _______ is happy”

এই ধরনের বাচ্চারা Surprise একেবারে পছন্দ করে না। প্রতিটা নতুন কাজের জন্য Social Story এবং Picture দিয়ে আগে থেকে মানসিক ভাবে তৈরী করতে হবে। যেমন চুল কাটার এক সপ্তাহ আগে থেকে নাপিত ওর চুল কাটছে এমন একটা ছবি দেয়ালে ঝুলিয়ে এর সম্পর্কে Social Story বলে ওকে মানসিক ভাবে তৈরী করা যেতে পারে। বাসায় কোনো মেহমানের আসা অথবা ওর নিজের জন্মদিনের জন্য আগে থেকে মানসিক ভাবে তৈরী করতে হবে। আগের বছরের জন্মদিনের ছবি দেখিয়ে Social Story শোনাতে হবে।

বেশিরভাগ Special Child হরিয়ে গেলে বুঝতে পারে না। ইংল্যান্ড আমেরিকাতে প্রতিদিন পত্রিকার পাতার শিরোনাম থাকে Autistic Child হারিয়ে যাবার ঘটনা। তবে ওখানে পুলিশ সাথে সাথে হেলিকপ্টার নিয়ে বাচ্চাকে খুঁজতে বেড়িয়ে যায়। কেউ খুঁজে পেলেও বাচ্চা যদি নাম, ঠিকানা বলতে না পারে তাহলে পুলিশের জন্য কঠিন হয়ে যায় বাবা-মায়ের কাছে বাচ্চাকে ফিরিয়ে দেয়া। এইজন্য বাচ্চার নাম, ঠিকানা, ব্লাড গ্রুপ, যে ডাক্তার সবসময় দেখে তার নাম ঠিকানা, ফোন নম্বর, বাবা-মায়ের নাম, ফোন নম্বর কাগজে লিখে লেখাটা কয়েক কপি করে বাচ্চার শার্ট-প্যান্টে যতগুলো পকেট আছে সবগুলোতে দিয়ে দেয়া যেতে পারে। বাচ্চা জানতে পারলে পকেট থেকে বের করে ফেলে দিতে পারে, তাই কয়েকটা পকেটে নাম-ঠিকানা দেয়া। যাতে একটা ফেলে দিলেও অন্যটা দেখে পুলিশ বাচ্চাকে বাবা মায়ের কাছে পৌছে দিতে পারে।

Parent হিসাবে আমাদের দায়িত্ব বাচ্চার Difficulties over come করতে সাহায্য করা এবং  ওর Strength কে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করা। আমরা কেউ চাই না যে একটা বাচ্চাও কারো উপর বোঝা হয়ে থাকুক। তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করাই Parent হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। আমার এই লেখা পড়ে যদি কোনো Special Child এর Parent এর মনে হয়, আমি অবাস্তব কথা লিখেছি, এভাবে একজন বাচ্চার পেছনে সময় এবং শ্রম দেয়া সম্ভব না, তাহলে ভুল ভাববেন। এখানে যেসব কথা লেখা আছে, তার প্রতিটা কাজ আমি আমার বাচ্চার জন্য করেছি এবং করছি। আল্লাহ্‌'র রহমতে এর ফলও দেখতে পাচ্ছি। তবে দিনরাত এইসব করতে কত যে কষ্ট হয়েছে, সেসব কথা নাই বা বললাম। নাওয়া খাওয়া, ঘুম বাদ দিয়ে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের পর নিজের সন্তানের এতটুকু Improvement দেখলে খুশিতে চোখে পানি চলে আসে। সারাদিন অনর্গল কথা বলতে বলতে, তার কান্না চিৎকার চেচাঁমেচি শুনতে শুনতে অনেক সময়  Brain আর Load নিতে পারে না। তখন পার্কে গিয়ে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে মুখ এবং কানের বিশ্রাম দিতে হয়। বাইরে  Special Child এর Parent কে প্রতিদিন কিছু সময় একা নিজের জন্য সময় ব্যয় করতে বলে। সেখানে Hospital এ Psychology Department এ “Time to talk” বলে একটা ব্যবস্থা আছে। Special Child এর  Parent অথবা Care Giver মাসে ২/১ বার সেখানে গিয়ে কথা বলে নিজের Stress কমাতে পারে। সারাক্ষন এমন একজনের সাথে কথা বলা যেকিনা অনেকবার বললেও বুঝতে পারবে না, অথবা এমন একজনকে শিখানো যেকিনা অনেকবার শিখানোর পরও ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে অনেক কঠিন। Parent এর জন্য অনেক  Frustrating। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, কঠিন হলেও অসম্ভব না। আমার বাচ্চার টিচার আমাকে বলে You are wonder women for your child” আমি মনে করি “Every Parent is wonder man/women for their Special Child” আমার একটা Blog আছে, quazisabnam.blogspot.com যেখানে শুরুতেই লেখা আছে Every child is special, some children are very special. This Blog is for their Parents আল্লাহ আমাকে অতখানি যোগ্য মনে করেছে বলে একজন Special Child এর দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি আমাদের সবার সহযোগিতা আর ভালবাসায় প্রতিটি Special Child ই স্বাবলম্বী হতে পারবে। Sunflower এর মত উজ্জল আর ঝলঝলে হয়ে ফুটে রবে আমাদের বাগানে।

১৮/১১/২০১৩

2 comments:

  1. This blog is goins to help a lot of parents. Thanks a lot for sharing...

    ReplyDelete
  2. Thanks a lot Ahmed Hasan. You were been a great support to build this Blog.

    ReplyDelete